জুমচাষের নতুন ফল ও ফসল ঘরে উঠবে। এ ফসল খাওয়ার আগে শস্য দেবতার প্রতি জানাতে হবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। গারো জাতিসত্তার মানুষের এটাই ঐতিহ্য। দেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর এ উৎসবের নাম ওয়ানগালা। শস্য দেবতা মিসি আর সালজংয়ের উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উৎপাদিত ফসল উৎসর্গের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এ ওয়ানগালা উৎসব উদ্যাপন করছেন ঢাকায় বসবাসরত গারো জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দিনভর রাজধানীর লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে উৎসব চলছে। এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসব শুরু করা হয়। পরে সর্বজনীন প্রার্থনা করা হয়। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় ওয়ানগালার আনুষ্ঠানিকতা।
ওয়ানগালার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে ছিল থক্কা ও শস্য উৎসর্গ অনুষ্ঠান। এ সময় গারো পুরোহিত (খামাল) মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে শস্য দেবতা মিসি সালজংয়ের উদ্দেশে উৎপাদিত শস্যগুলো উৎসর্গ করেন। এ পর্বে ছিল ‘আমুয়া’, ‘রুগালা’র মাধ্যমে দেবতার উদ্দেশে মোরগ বলি ও ঐতিহ্যবাহী পানীয় ‘চু’ উৎসর্গ।
ওয়ানগালায় গিয়ে দেখা যায়, গারোরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে উৎসবে যোগ দিয়েছেন। গারো নারী-পুরুষের কারও কারও মাথায় ‘খুতুপে’ নামের নানা কারুকাজ করা পাগড়ি। কেউ কেউ ওই খুতুপে গুঁজেছেন মোরগের পালক দিয়ে তৈরি দমি নামের বিশেষ অলংকার। পরনে গারোদের ঐতিহ্যবাহী দকমান্দা, দকসারির মতো নানান রঙের পোশাক। কোমরে রিকমাচু অর্থাৎ বিছা। ওয়ানগালা উৎসব পাহাড়ি জুমচাষকে কেন্দ্র করে উদ্যাপিত হয়। নতুন ফসল ঘরে তোলার পর নকমা (গ্রামপ্রধান) সবার সঙ্গে আলোচনা করে অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেন। ঢাকায় এ উৎসব উদ্যাপনের জন্য প্রতিবছর একজনকে নকমা বা প্রধান নির্বাচন করা হয়। পরে প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের শুরুতে এ উৎসব উদ্যাপন করা হয়। ওয়ানগালাকে কেন্দ্র করে শহুরে কর্মব্যস্ততার ফাঁকে দিনভর গারোদেরকে নিজেদের মতো করে আনন্দে-উৎসব করতে দেখা গেছে। বিদ্যালয়ের মাঠে গড়ে ওঠা অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলোতে ঘুরে ঘুরে স্বাদ নেন নিজেদের ঐতিহ্যবাহী নানা পদের পিঠাসহ অন্য খাবারের। কেউ কেউ বাসায় খাওয়ার জন্য কিনে নেন জুমের সবজি ও আলুর পাশাপাশি শামুক, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া ইত্যাদি। এবারের ওয়ানগালা উদ্যাপন কমিটির নকমা সভাপতি অন্ত ঘাগ্রা বলেন, ওয়ানগালা গারোদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উৎসব। ঢাকায় বসবাসরত গারোরা দীর্ঘদিন ধরে এ উৎসব উদ্যাপন করে আসছেন। ‘মিসি সালজং’ বা শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতি চেয়ে এ উৎসব পালন করা হয়। এদিন দুপুরের বিরতির পর নিজস্ব ভাষার নাচ-গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় ওয়ানগালার অনুষ্ঠানস্থলে। অনুষ্ঠান চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
গারোদের ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব পালিত হচ্ছে
- আপলোড সময় : ০৬-১২-২০২৪ ১১:০১:৫০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-১২-২০২৪ ১১:০১:৫০ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ